ঝড় ওঠার কথা ছিল ক্রিস গেইলের ব্যাটে। কিন্তু তার উপস্থিতিতে তাকে ম্লান করেই ঝড় ওঠালেন মঈন আলী। আর তাতে জয় পেল ইংল্যান্ড।
দুটি সেঞ্চুরি আগেও করেছেন। তবে তখন ছিলেন টপ অর্ডারে। সময়ের পরিক্রমায় এখন ব্যাট করেন অনেক নিচে। সময়ই পান কম। সেইটুকুতেই সেঞ্চুরির উপায় বের করে ফেললেন মঈন আলী। সাতে নেমে করলেন বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরি। রানের পাহাড় গড়ে জিতল ইংল্যান্ড। সেই সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করুণ চিত্র আরেকবার প্রকট হয়ে দেখা দিলো।
রোববার তৃতীয় ওয়ানডেতে ব্রিস্টলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২৪ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। মঈনের ঝড়ো সেঞ্চুরির সঙ্গে জো রুট ও বেন স্টোকসের দারুণ দুটি ইনিংসে ইংল্যান্ড তোলে ৩৬৯ রান। লিয়াম প্লাঙ্কেট ৫ উইকেট নিয়ে ক্যারিবিয়ানদের গুটিয়ে দেন ২৪৫ রানে।
পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ইংল্যান্ড এগিয়ে গেল ২-০-এ। দ্বিতীয় ওয়ানডে পরিত্যক্ত হয় বৃষ্টিতে।
৫৩ বলে সেঞ্চুরি করেছেন মইন। ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি, ইংল্যান্ডের মাটিতে দ্রুততম। তবে এই পরিসংখ্যানও আসলে বোঝাতে পারছে না, কতটা তাণ্ডব চালিয়েছেন মইন। প্রথম পঞ্চাশে বল লেগেছিল ৪১টি। সেখান থেকে পরের পঞ্চাশ করেছেন মাত্র ১২ বলে!
এক পর্যায়ে মইনের রান ছিল ৩৯ বলে ৩৯। পরের ১৪ বলে বয়ে গেল টর্নেডো। ৮টি ছক্কা ও ২ চারে এই ১৪ বলে করেছেন ৬১ রান!
অথচ ইংল্যান্ডের শুরুটা খুব ভালো ছিল না। ওপেনিংয়ে ৩৫ বলে ৩৬ করেছেন অ্যালেক্স হেলস। তার পরও ৭৪ রানে হারায় তারা ৩ উইকেট।
অথচ ইংল্যান্ডের শুরুটা খুব ভালো ছিল না। ওপেনিংয়ে ৩৫ বলে ৩৬ করেছেন অ্যালেক্স হেলস। তার পরও ৭৪ রানে হারায় তারা ৩ উইকেট।
চতুর্থ উইকেটে জো রুট ও বেন স্টোকসের ১৩২ রানের জুটিতে লাগাম নেয় ইংল্যান্ড। ৭৯ বলে ৮৪ রান করেন রুট, ৬৩ বলে ৭৩ স্টোকস।
এই দুজনের সঙ্গে জস বাটলারের দ্রুত বিদায়ে ইংল্যান্ডের রান হয়ে যায় ৬ উইকেটে ২১৭। কে জানত, মঈনের ভাবনায় ছিল এমন কিছু!
সপ্তম উইকেটে ক্রিস ওকসের সঙ্গে গড়েন ১১৭ রানের জুটি। যেখানে ওকসের রান ছিল ৩৪, মইনের ৮২! মঈনের তাণ্ডবেই শেষ ৬ ওভারে ৯৩ রান তোলে ইংল্যান্ড।
৩৭০ রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আশা দেখাতে পারতেন একজনই, ক্রিস গেইল। তিনি চেষ্টাও করেছেন। তবে সঙ্গী পাননি কাউকে। দারুণ খেলেও শেষ পর্যন্ত রান আউট হয়েছেন নিজের দোষেই। ৯ চার ও ৬ ছক্কায় করেছেন ৭৮ বলে ৯৪।
৩৭০ রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আশা দেখাতে পারতেন একজনই, ক্রিস গেইল। তিনি চেষ্টাও করেছেন। তবে সঙ্গী পাননি কাউকে। দারুণ খেলেও শেষ পর্যন্ত রান আউট হয়েছেন নিজের দোষেই। ৯ চার ও ৬ ছক্কায় করেছেন ৭৮ বলে ৯৪।
জেসন মোহাম্মদ, জেসন হোল্ডার চেষ্টা করেছেন। তবে খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। প্লাঙ্কেটের দারুণ বোলিং নিশ্চিত করেছে বড় জয়। ৩২ বছর বয়সী পেসার ক্যারিয়ারে প্রথমবার পেয়েছেন ৫ উইকেট।
মইন উইকেট পাননি। তবে ব্যাট হাতে যা করেছেন, তার পর আর কিছু দরকারও ছিল না। দিনের নায়ক তিনিই!
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ইংল্যান্ড : ৫০ ওভারে ৩৬৯/৯ (বেয়ারস্টো ১৩, হেলস ৩৬, রুট ৮৪, মর্গ্যান ০, স্টোকস ৭৩, বাটলার ২, মইন ১০২, ওকস ৩৪, প্লাঙ্কেট ৯, উইলি ১*, রশিদ ৯*; টেলর ১/৭৫, হোল্ডার ২/৮১, কামিন্স ৩/৮২, বিশু ০/৩৩, নার্স ১/৫৯, পাওয়েল ১/৩৮।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩৯.১ ওভারে ২৪৫ (গেইল ৯৪, লুইস ১৩, হোপ ২০, স্যামুয়েলস ১১, মোহাম্মদ ৩৮, পাওয়েল ৮, হোল্ডার ৩৪, নার্স ১, বিশু ১২, টেলর ০, কামিন্স ৪*; ওকস ০/৩২, উইলি ১/৩৪, প্লাঙ্কেট ৫/৫২, মইন ০/৬৫, স্টোকস ০/২৫, রশিদ ৩/৩৪)।
ফল : ইংল্যান্ড ১২৪ রানে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ২-০-এ এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ : মঈন আলি
ভারতের সিরিজ জয়
রোববার তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে একদিনের সিরিজ জিতে নিয়েছে ভারত।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে তোলে ২৯৩ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৩ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে ফেলে ভারত। রহিত শর্মা ও অজিঙ্কা রাহানে জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন। তার উপর দাঁড়িয়ে ঝোড়ো ব্যাটিং করে ‘টিম ইন্ডিয়া’র জয় কার্যত নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন নতুন তারকা হার্দিক পান্ডিয়া। ম্যাচের সেরা পুরস্কারও পান তিনি।
হোলকারের উইকেটে প্রচুর রান ছিল। তাই ২৯৪ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে রহিত ও রাহানে ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়ান। ওপেনিং জুটিতে তাঁরা যোগ করেন ১৩৯ রান। একটা সময় মনে হয়েছিল, ভারত বড় ব্যবধানে জিতবে। কিন্তু রহিত শর্মা ও অজিঙ্কা রাহানে পর পর আউট হতে লড়াইয়ে ফিরে আসার সুযোগ পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ছ’টি চার ও চারটি ছক্কার সাহায্যে ৬২ বলে রহিত করেন ৭১ রান। ন’টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৭০ রান করেন রাহানে। সিরিজে এটি তাঁর দ্বিতীয় অর্ধশতরান।
জোড়া ধাক্কা সামলে ম্যাচের রাশ হাতে তুলে নেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়া। তৃতীয় উইকেটে তাঁরা তোলেন ৫৬ রান। স্রোতের বিপরীতে কোহলি (২৮) আচমকা উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে দলকে কিছুটা বিপাকে ফেলে দিয়েছিলেন। তার উপর দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং করে কেদার যাদব (২) অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ করে দেন। কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়ার ঝোড়ো ব্যাটিং স্মিথ বাহিনীর যাবতীয় প্রয়াসে পানি ঢেলে দেয়। তবে ৪১ রানের মাথায় হার্দিকের ক্যাচটা যদি স্মিথের হাত থেকে না পড়ত, তাহলে খেলার ফল অন্য রকম হতেও পারত। এটাই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট!
হার্দিক আর পিছন ফিরে তাকাননি। শক্তি বাড়িয়ে চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করেন তিনি। হার্দিকের ৭৮ রানের ইনিংসে রয়েছে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কা। মণীশ পাণ্ডে এদিন দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেন। ৬টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৬ রানে তিনি অপরাজিত থাকেন। মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ঘিরে ভারতীয় সমর্থকদের মধ্যে বাড়তি উন্মাদনার সঞ্চার ঘটছে প্রতিটি ম্যাচেই। মাহি মাঠে নামার সময় হোলকার স্টেডিয়ামের দর্শকরা তাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। ধোনির ব্যাটে ঝড় দেখতে চেয়েছিলেন সকলেই। কিন্তু মাহি সেই পথে হাঁটেননি। ৬ বলে ৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া শুরুটা বেশ ভালোই করেছিল। এদিন ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন অ্যারন ফিনচ। চোটের কারণে গত দু’টি ম্যাচে তিনি খেলতে পারেননি। ভারত পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় স্মিথ বাহিনী মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিল প্রত্যাবর্তনের আশায়। পুরো ফিট না হওয়া সত্ত্বেও ফিনচকে কার্যত ঝুঁকি নিয়েই প্রথম একাদশে রাখে অস্ট্রেলিয়া টিম ম্যানেজমেন্ট। ফিনচ হতাশ করেননি। ওয়ার্নারের সঙ্গে জুটি বেঁধে ধীর গতিতে শুরু করেন। প্রথম দশ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৪৯ রান। নতুন বলে হোলাকারের বাইশগজে বেশ ভালোই বল করেন ভারতের দুই পেসার ভুবনেশ্বর কুমার ও যশপ্রীত বুমরাহ।
ভারতকে প্রথম সাফল্যটি এনে দেন হার্দিক পান্ডিয়া। তার বলে ৪২ রানে আউট হন ওয়ার্নার। তবে ওপেনিং জুটিতে ফিনচের সঙ্গে জুটি বেঁধে ৭০ রান যোগ করেন তিনি। যার সুবাদে অস্ট্রেলিয়ার সামনে বড় স্কোর খাড়া করার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। সেই সম্ভাবনা আরও বেড়েছিল দ্বিতীয় উইকেটে ফিনচ ও অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ ১৫৪ রান যোগ করার পর। অ্যারন ফিনচ এদিন একদিনের ক্রিকেটে অষ্টম শতরান পূর্ণ করেন। চোট সারিয়ে মাঠে ফেরার পর তাঁকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। বিশেষ করে ভারতের দুই রিস্ট স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল এবং কুলদীপ যাদবের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে যথেষ্ট সাবলীল ছিলেন তিনি। কুলদীপের বিরুদ্ধে তিনি ২৬ বলে ৪১ রান নেন। ১২৫ বলে ১২৪ রানে তিনি আউট হন। ফিনচের ইনিংসে রয়েছে ১২টি চার ও ৫টি ছক্কা। ফিনচ চারটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন ‘গুগলি’তে।
৪০ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ২৩৪। সেই সময় মনে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া হয়তো সাড়ে তিনশো রান তুলে ফেলবে। কিন্তু তার পরেই স্পিনারদের হাত ধরে ম্যাচে ফিরে আসে ‘টিম ইন্ডিয়া’। স্মিথ ৬৩ রানে কুলদীপের বলে ধরা পড়েন বুমরাহর হাতে। অজি অধিনায়কের ইনিংসে রয়েছে ৫টি চার। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ফের বড় রান করতে ব্যর্থ। চাহালের বলে তাঁকে ৫ রানে স্টাম্পিং করেন ধোনি। পর পর তিনটি উইকেট পড়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার রানের গতিও মন্থর হয়ে যায়। তার উপর বুমরাহ বোল্ড করেন ট্রেভিস হেডকে (৪)। শেষ দশ ওভারে অস্ট্রেলিয়া চারটি উইকেট হারায়। তোলে মাত্র ৫৯ রান। মার্কাস স্টোইনিস ২৮ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
Comments
Post a Comment