আমরা বাইরে বসে বস্ফািরিত চোখে। ঋষির ধ্যানে দুই শিল্পী যেন লিখে চলেছেন অমরকাব্য। সেই মগ্ন নায়কদের কখন বিশ্বাস হতে শুরু করে যে আজ রূপকথা হতে চলেছে? শুনে নিই তাঁদের কাছ থেকেই
প্রশ্ন : ক্যারিয়ারে যতগুলো ইনিংস খেলেছেন তার মধ্যে এটা কি সেরা?
সাকিব : যখনই এ রকম ভালো কিছু একটা করি তখন আপনারা এ রকম কিছু একটা বলেন। আপনাদের কাছে সব সময়ই নতুন ইনিংসটাকে সেরা মনে হয়।
যা-ই হোক, দলের সাফল্যে অবদান রাখতে পারলে সব সময় দারুণ লাগে। আর ব্যক্তিগত অর্জনের দিক থেকে সেঞ্চুরি করাটা বিরাট ব্যাপার। কিন্তু মূল বিষয়টা হলো এটা আমাদের দলের জন্য একটা বিরাট অর্জন। বড় একটা পদক্ষেপ হলো এটা। ভবিষ্যতে আমাদের এ রকম অবস্থায়ও মনে হবে সম্ভব। যেকোনো জায়গা থেকে ম্যাচ জেতার বিশ্বাস দিয়ে গেল এই ম্যাচ।
প্রশ্ন : সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবনাটা কী?
সাকিব : এখন তো আর আমাদের হাতে কিছু নেই। আমরা সবাই চাইব অষ্ট্রেলিয়া হেরে যাক, কিন্তু আমাদের সাপোর্টে তো আর কিছু হবে না। সেমিফাইনালে উঠলে আমাদের জন্য দারুণ একটা অর্জন হবে, কিন্তু তা না হলেও আমি মনে করি এই টুর্নামেন্টটা আমাদের জন্য বিরাট একটা প্রাপ্তি। বিশ্বমঞ্চে এ রকম পারফরম্যান্স অবশ্যই আমাদের অনেক এগিয়ে দেবে।
প্রশ্ন : আপনি যখন নামেন তখন খুবই খারাপ অবস্থায় দল। সেই সময়ের ভাবনাটা কী ছিল?
সাকিব : কিছুই না। যতক্ষণ সম্ভব ব্যাট করা। তখন অনেক ওভার বাকি ছিল, আর ইদানীং তো খুব বেশি ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাই না। তাই লক্ষ্য ছিল যত সময় সম্ভব ব্যাটিং করে যাব। আর রিয়াদ (মাহমুদ উল্লাহ) ভাই এসে চমৎকার খেলতে শুরু করল
প্রশ্ন : এরপর কখন মনে হলো যে সম্ভব?
সাকিব : যখন আমরা জুটিতে ১০০-১১০ রান করে ফেললাম তখন খেয়াল করে দেখলাম ২০ ওভারের মতো বাকি, করতে হবে ১৪০ রানের মতো। তখন মনে হলো সম্ভব। ইদানীং আমরা অনেক টি-টোয়েন্টি খেলি, কাজেই ওভারে ৭ রান করে করা এমন কিছু কঠিন ব্যাপার না। গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমাদের ৪০-৪৫ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করা। সেটা আমরা করতে পেরেছি।
প্রশ্ন : সেঞ্চুরির পর সেরকম উল্লাস করতে দেখা গেল না, যা সাধারণত করেন। সেটা কি এ জন্য যে শেষ করে আসার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন?
সাকিব : সেঞ্চুরি ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবে দারুণ, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তো দল জেতা। সেটাই ছিল মূল ভাবনায়। তবে হ্যাঁ, ৮০-র পর থেকে শেষ করে আসার কথা মনে হচ্ছিল। আর তামিম সব সময় বলে, ‘জীবনেও তো শেষ করে আসতে পারলি না!’ তাই শেষ করে আসার একটা চিন্তা ছিল। চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু হলো না। হয়তো অন্য কোনো ম্যাচের জন্য বাকি থাকল।
প্রশ্ন : কিন্তু এটা তো একরকম শেষ করে আসাই...
সাকিব : না। ক্রিকেটের কথা তো বলা যায় না। যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। তাই শেষ করতে পারলে অবশ্যই ভালো লাগত। আর আসলে ওই সময় আমি একটু দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, মারতে গেলে যদি রিয়াদ ভাইয়ের সেঞ্চুরিটা না হয়। এক-ই নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পরে বল দেখে মেরে দেই। তবে মারার মুডে থাকলে বোধহয় হয়ে যেত।
প্রশ্ন : মাহমুদ উল্লাহর সঙ্গে ব্যাট করার অভিজ্ঞতাটা কি সব সময়ই এ রকম উপভোগ্য।
সাকিব : যেহেতু আমরা অনেক দিন ধরে একসঙ্গে খেলছি, তাই অনেকগুলো ভালো জুটি হয়েছে। তেমনি তামিমের সঙ্গে আছে, মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গেও আছে। আর আমি আর রিয়াদ ভাই পাশাপাশি ব্যাট করায় বড় জুটি করার সুযোটাও একটু বেশি থাকে। অনেক দিন একসঙ্গে খেলায় আমরা একে অন্যকে বুঝতে পারি। জানি কখন উনি কী করতে চাচ্ছে। বা আমার কী করা উচিত। ফলে আমাদের মধ্যে জুটি হলে এটা দলের জন্যই খুব ভালো হয়।
প্রশ্ন : সেমিফাইনাল তো মনে হয় হয়ে যাচ্ছে? প্রতিপক্ষ হিসেবে কাকে চান?
সাকিব : যে দল আসবে।
প্রশ্ন : সবার জন্য উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ?
সাকিব : না না চ্যালেঞ্জ কোথায়? আমি বলছি যারা আসবে, আমরা যদি উঠি তাদের সঙ্গেই খেলার জন্য তৈরি।
Comments
Post a Comment