সৌরভ গাঙ্গুলী হেসে বললেন, ‘তাহলে তোমাদের আর আমাদের মধ্যে সেমিফাইনাল। কী মনে হয়, বাংলাদেশ পারবে?’
নিজেই উত্তরটা দিয়ে দিলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে। তবে বলা যায় না কিন্তু। তোমরা ভালো খেলছ!’
সৌরভের সঙ্গে সম্বোধনটা সেই শুরু থেকেই ‘তুমি-তুমি’। যখনই দেখা হয়, বাংলাদেশের খোঁজখবর নেন। তবে এদিন যে শুধু সৌরভ নন, সবার মুখেই বাংলাদেশ!
রমিজ রাজা, সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, রবি শাস্ত্রী, সুনীল গাভাস্কার, এমনকি মাইক আথারটন পর্যন্ত বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁদের মুগ্ধতার কথা জানিয়ে দিলেন। রমিজ রাজা ও মাঞ্জরেকার তো নিজে থেকেই।
প্রেসবক্স আর কমেন্ট্রি বক্স একেবারে লাগোয়া। সাংবাদিক আর কমেন্টেটরদের খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও একসঙ্গে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেও অভিন্ন ঠিকানায় ছুটতে হয়। প্রেসবক্সের পেছনের করিডরটাতে কমেন্টেটরদের তাই নিত্য আনাগোনা। চা-কফিও ওখানে। কেউ না কেউ আসছেনই। পরে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কেটেছে সৌরভের সঙ্গে। তবে সকালে প্রথম দেখা ওই কফি নিতে গিয়েই।
তারিখ: ১২ জুন। স্থান: কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ চলছে। বাংলাদেশের বাকি সব সাংবাদিক বাংলাদেশ দলকে অনুসরণ করে বার্মিংহামে। কার্ডিফের প্রেসবক্সে এই সাংবাদিক বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি। বাংলাদেশ দলের প্রাপ্য সব অভিনন্দন তাই তিনিই পেলেন! সেটি পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সাংবাদিকদের কাছ থেকে যেমন, তেমনি কমেন্ট্রি বক্সের তারাদের কাছ থেকেও।
রমিজ রাজা দেখা হতেই বললেন, ‘কনগ্রাচুলেশনস! বাংলাদেশ তো দেখিয়ে দিল। ভেরি হ্যাপি ফর দেম।’ মাঞ্জরেকার তিন দিন আগে এই মাঠেই সাকিব আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ের কথা আবার মনে করলেন, ‘দুটি ইনিংসই কী দুর্দান্ত!’
শুধু ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় নয়, ভারতীয় দলের টিম ডিরেক্টর থাকার সুবাদে বাংলাদেশের উত্থানটা খুব কাছে থেকে দেখেছেন রবি শাস্ত্রী। বাংলাদেশের সেমিফাইনালে উঠে যাওয়ায় তিনি তাই একটুও বিস্মিত নন, ‘আমি তো আগেই বলেছি, বাংলাদেশ গত দু-তিন বছরে সবচেয়ে উন্নতি করা দল।’
সেমিফাইনালে ভারতকে এগিয়ে রাখছেন। রাখারই কথা। কাগজে-কলমের শক্তিতে ভারত অনেকটাই এগিয়ে। তবে চ্যাম্পিয়ন কারা হবে—এই ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় শাস্ত্রী বাংলাদেশকেও বাদ দিয়ে দিচ্ছেন না, ‘সেমিফাইনালের চার দলের যেকোনোটিই চ্যাম্পিয়ন হতে পারে।’
আট দল থেকে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এখন চার দলের খেলা। কার্ডিফে আজ ইংল্যান্ড-পাকিস্তান প্রথম সেমিফাইনাল। আগামীকাল বার্মিংহামে বাংলাদেশ-ভারত। চার সেমিফাইনালিস্টের নামগুলো আবার একটু দেখুন। একটু কি বিস্ময় জাগছে না! ইংল্যান্ডে খেলা, আর সেমিফাইনালের চার দলের তিনটিই কিনা উপমহাদেশের! ইংলিশ কন্ডিশন নিয়ে এত যে কথা, সেসব কি তাহলে অর্থহীন?
ফেসবুকে না কোথায় যেন দেখলাম, একজন মজা করে লিখেছেন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ১৯৪৭ ব্যাচের পুনর্মিলনী হচ্ছে। তাই তো, এভাবে তো দেখাই যায়! ইংল্যান্ড আর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে থাকা ভারতীয় উপমহাদেশ—এটাই তো এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল। উপমহাদেশে ক্রিকেট নিয়ে গিয়েছিল ইংরেজরা। নিজেদের দেশে আয়োজিত টুর্নামেন্টে ১৯৪৭ সালে আলাদা হয়ে যাওয়া সবাই আবার কেমন একসঙ্গে! ট্রফি থেকে সবাই দুটি ম্যাচ দূরে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যা কল্পনাই করা যায়নি।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অবশ্য কন্ডিশন নিয়ে কথাবার্তাকে অর্থহীন প্রমাণ করার কাজটা আগেও করেছে। ২০০৬ সালে ভারতে আয়োজিত টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে তো উপমহাদেশের কোনো দলই ছিল না!
তীব্র ঠান্ডা, কনকনে বাতাস, মেঘলা আকাশের নিচে বলে সাপের মতো সুইং—এসব ভেবে ইংল্যান্ডে খেলতে আসার আগে উপমহাদেশীয় ব্যাটসম্যানদের অনেক বিনিদ্র রাত্রি কেটেছে। এবার তাহলে কী হলো? একটা কারণ তো অনুমান করাই যাচ্ছে। ইংলিশ কন্ডিশনের মূল যে তিনটি বৈশিষ্ট্য, তার প্রথম দুটি—তীব্র ঠান্ডা ও কনকনে বাতাস—এবারও আছে। তবে বল বলতে গেলে সুইংই করছে না। কদিন আগে আইসিসির ওয়েবসাইটে ইয়ান বিশপ একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বল সেভাবে সুইং না করায় সাবেক ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলারও মহাবিস্মিত এবং তিনিও এর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অবশ্যই চাইবেন, এটা রহস্য হয়েই থাকুক। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বল একটু সুইং করেছিল। তাতে কী হয়েছিল, সেমিফাইনালের আগে তা আর মনে করে কাজ নেই। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে সাউদি-বোল্টও নতুন বলে সুইং পেয়েছেন। তাতে কী হয়েছে, সেটিও তো জানেন। সাউদি-বোল্টের ওই প্রলয়নাচনের পরে যা হয়েছে, সেটিই আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এক ঝটকায় বাকি বিশ্বের চোখে অনেকটা ওপরে তুলে দিয়েছে। রবি শাস্ত্রী যেমন বললেন, ‘উপমহাদেশে আমরা অনেক দিনই বাংলাদেশের উন্নতিটা বুঝতে পারছিলাম। এখন বাকি বিশ্বও তা বুঝেছে।’ বাংলাদেশ যেনতেনভাবে সেমিফাইনালে উঠে গেলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বৃষ্টিতে পাওয়া ১ পয়েন্টই বড় হয়ে উঠত। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অমন অবিশ্বাস্য এক জয়ের পর কেউই সেমিফাইনালে বাংলাদেশকে অবাঞ্ছিত ভাবছে না।
দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড নেই আর বাংলাদেশ সেমিফাইনালে—এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সবচেয়ে বড় বিস্ময় এটা। সুন্দরতম গল্পও! তা সেই গল্পের শেষটা যা-ই হোক না কেন!
নিজেই উত্তরটা দিয়ে দিলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে। তবে বলা যায় না কিন্তু। তোমরা ভালো খেলছ!’
সৌরভের সঙ্গে সম্বোধনটা সেই শুরু থেকেই ‘তুমি-তুমি’। যখনই দেখা হয়, বাংলাদেশের খোঁজখবর নেন। তবে এদিন যে শুধু সৌরভ নন, সবার মুখেই বাংলাদেশ!
রমিজ রাজা, সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, রবি শাস্ত্রী, সুনীল গাভাস্কার, এমনকি মাইক আথারটন পর্যন্ত বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁদের মুগ্ধতার কথা জানিয়ে দিলেন। রমিজ রাজা ও মাঞ্জরেকার তো নিজে থেকেই।
প্রেসবক্স আর কমেন্ট্রি বক্স একেবারে লাগোয়া। সাংবাদিক আর কমেন্টেটরদের খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও একসঙ্গে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেও অভিন্ন ঠিকানায় ছুটতে হয়। প্রেসবক্সের পেছনের করিডরটাতে কমেন্টেটরদের তাই নিত্য আনাগোনা। চা-কফিও ওখানে। কেউ না কেউ আসছেনই। পরে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কেটেছে সৌরভের সঙ্গে। তবে সকালে প্রথম দেখা ওই কফি নিতে গিয়েই।
তারিখ: ১২ জুন। স্থান: কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ চলছে। বাংলাদেশের বাকি সব সাংবাদিক বাংলাদেশ দলকে অনুসরণ করে বার্মিংহামে। কার্ডিফের প্রেসবক্সে এই সাংবাদিক বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি। বাংলাদেশ দলের প্রাপ্য সব অভিনন্দন তাই তিনিই পেলেন! সেটি পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সাংবাদিকদের কাছ থেকে যেমন, তেমনি কমেন্ট্রি বক্সের তারাদের কাছ থেকেও।
রমিজ রাজা দেখা হতেই বললেন, ‘কনগ্রাচুলেশনস! বাংলাদেশ তো দেখিয়ে দিল। ভেরি হ্যাপি ফর দেম।’ মাঞ্জরেকার তিন দিন আগে এই মাঠেই সাকিব আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ের কথা আবার মনে করলেন, ‘দুটি ইনিংসই কী দুর্দান্ত!’
শুধু ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় নয়, ভারতীয় দলের টিম ডিরেক্টর থাকার সুবাদে বাংলাদেশের উত্থানটা খুব কাছে থেকে দেখেছেন রবি শাস্ত্রী। বাংলাদেশের সেমিফাইনালে উঠে যাওয়ায় তিনি তাই একটুও বিস্মিত নন, ‘আমি তো আগেই বলেছি, বাংলাদেশ গত দু-তিন বছরে সবচেয়ে উন্নতি করা দল।’
সেমিফাইনালে ভারতকে এগিয়ে রাখছেন। রাখারই কথা। কাগজে-কলমের শক্তিতে ভারত অনেকটাই এগিয়ে। তবে চ্যাম্পিয়ন কারা হবে—এই ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় শাস্ত্রী বাংলাদেশকেও বাদ দিয়ে দিচ্ছেন না, ‘সেমিফাইনালের চার দলের যেকোনোটিই চ্যাম্পিয়ন হতে পারে।’
আট দল থেকে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এখন চার দলের খেলা। কার্ডিফে আজ ইংল্যান্ড-পাকিস্তান প্রথম সেমিফাইনাল। আগামীকাল বার্মিংহামে বাংলাদেশ-ভারত। চার সেমিফাইনালিস্টের নামগুলো আবার একটু দেখুন। একটু কি বিস্ময় জাগছে না! ইংল্যান্ডে খেলা, আর সেমিফাইনালের চার দলের তিনটিই কিনা উপমহাদেশের! ইংলিশ কন্ডিশন নিয়ে এত যে কথা, সেসব কি তাহলে অর্থহীন?
ফেসবুকে না কোথায় যেন দেখলাম, একজন মজা করে লিখেছেন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ১৯৪৭ ব্যাচের পুনর্মিলনী হচ্ছে। তাই তো, এভাবে তো দেখাই যায়! ইংল্যান্ড আর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে থাকা ভারতীয় উপমহাদেশ—এটাই তো এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল। উপমহাদেশে ক্রিকেট নিয়ে গিয়েছিল ইংরেজরা। নিজেদের দেশে আয়োজিত টুর্নামেন্টে ১৯৪৭ সালে আলাদা হয়ে যাওয়া সবাই আবার কেমন একসঙ্গে! ট্রফি থেকে সবাই দুটি ম্যাচ দূরে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যা কল্পনাই করা যায়নি।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অবশ্য কন্ডিশন নিয়ে কথাবার্তাকে অর্থহীন প্রমাণ করার কাজটা আগেও করেছে। ২০০৬ সালে ভারতে আয়োজিত টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে তো উপমহাদেশের কোনো দলই ছিল না!
তীব্র ঠান্ডা, কনকনে বাতাস, মেঘলা আকাশের নিচে বলে সাপের মতো সুইং—এসব ভেবে ইংল্যান্ডে খেলতে আসার আগে উপমহাদেশীয় ব্যাটসম্যানদের অনেক বিনিদ্র রাত্রি কেটেছে। এবার তাহলে কী হলো? একটা কারণ তো অনুমান করাই যাচ্ছে। ইংলিশ কন্ডিশনের মূল যে তিনটি বৈশিষ্ট্য, তার প্রথম দুটি—তীব্র ঠান্ডা ও কনকনে বাতাস—এবারও আছে। তবে বল বলতে গেলে সুইংই করছে না। কদিন আগে আইসিসির ওয়েবসাইটে ইয়ান বিশপ একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বল সেভাবে সুইং না করায় সাবেক ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলারও মহাবিস্মিত এবং তিনিও এর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অবশ্যই চাইবেন, এটা রহস্য হয়েই থাকুক। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বল একটু সুইং করেছিল। তাতে কী হয়েছিল, সেমিফাইনালের আগে তা আর মনে করে কাজ নেই। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে সাউদি-বোল্টও নতুন বলে সুইং পেয়েছেন। তাতে কী হয়েছে, সেটিও তো জানেন। সাউদি-বোল্টের ওই প্রলয়নাচনের পরে যা হয়েছে, সেটিই আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এক ঝটকায় বাকি বিশ্বের চোখে অনেকটা ওপরে তুলে দিয়েছে। রবি শাস্ত্রী যেমন বললেন, ‘উপমহাদেশে আমরা অনেক দিনই বাংলাদেশের উন্নতিটা বুঝতে পারছিলাম। এখন বাকি বিশ্বও তা বুঝেছে।’ বাংলাদেশ যেনতেনভাবে সেমিফাইনালে উঠে গেলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বৃষ্টিতে পাওয়া ১ পয়েন্টই বড় হয়ে উঠত। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অমন অবিশ্বাস্য এক জয়ের পর কেউই সেমিফাইনালে বাংলাদেশকে অবাঞ্ছিত ভাবছে না।
দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড নেই আর বাংলাদেশ সেমিফাইনালে—এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সবচেয়ে বড় বিস্ময় এটা। সুন্দরতম গল্পও! তা সেই গল্পের শেষটা যা-ই হোক না কেন!
Comments
Post a Comment