ভবিষ্যৎ ওয়াসিম আকরাম? অভিষেকের এক বছরেই যা করছিলেন ইরফান পাঠান, তাঁকে তা-ই মনে করা হতো। তাঁর পারফরম্যান্স এমন উচ্চতা ছুঁয়েছিলে, কদিন পরে মনে হয়েছিল, ইরফানকে অন্য কারও নামে পরিচিত হতে হবে না। পরবর্তী কয়েক বছরে সে পথেই এগোচ্ছিলেন ইরফান। কিন্তু পথ হারিয়ে সেই ইরফানই এখন হারিয়ে বসা এক নাম। ভারতীয় স্কোয়াডের ধারেকাছেও থাকেন না তিনি। এ জন্য ইরফান নিজেকে যেমন দায়ী করেন, তেমনি দায় চাপান ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কাঁধেও।
এখন স্থানীয় ক্রিকেটে ব্যস্ত। একসময় ভারতীয় বোলিংকে নেতৃত্ব দেওয়া ইরফান রঞ্জি ট্রফিতে বরোদার নেতৃত্বে আছেন। এখনো স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় দলে ফেরার। ক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এ মৌসুমে আমি আগেই শুরু করেছি এবং স্বপ্ন পূরণ করতে যা করা দরকার তার সবকিছুই করছি। এ মৌসুম খুব, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি, হয়তো এটাই শেষ সুযোগ।’
শেষের ঘণ্টা শোনা ইরফানের শুরুটা হয়েছিল অবিশ্বাস্য। বাঁহাতি সুইং বোলিংয়ের ভবিষ্যৎ হিসেবে তাঁকেই দেখা হচ্ছিল। টেস্টের প্রথম তিন বলেই হ্যাটট্রিক করার অনন্য এক অর্জনও দেখা গেছে তাঁর সুবাদে। কিন্তু একজন অলরাউন্ডারের জন্য ভারতের দুই দশক পুরোনো তৃষ্ণা ও চোট সব নষ্ট করে দিয়েছে। তবে চোটে পড়ার পেছনে বোর্ডেরও দায় দেখেন ইরফান। কীভাবে চোটে পড়েছিলেন, সে স্মৃতি এখনো তাজা ৩৩ বছর বয়সী পেসারের মনে, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ খেলছিলাম, সেমিফাইনাল। আমরা ম্যাচটা হেরেছিলাম। সেদিনই আমরা ভারতে ফিরে এসেছিলাম। দুদিন পরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন দিনের ম্যাচে নামতে হয়েছিল। সে ম্যাচের তৃতীয় দিনে আবার বরোদা ফিরি। পরদিনই আবার রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে নেমেছি। সেঞ্চুরি করেছিলাম, এক ইনিংসে ২০ ওভারের বেশি বল করেছিলাম। এর মানে টানা নয় দিন খেলার মাঝে ছিলাম আমি। হাঁটুতে ব্যথা শুরু হলো এবং একটা চিড়ও ধরা পড়ল।’
নিজের চোটে পড়ার জন্য অতিরিক্ত কাজের চাপ নেওয়াকে দায়ী করেন ইরফান, ‘দশ দিনের মধ্যে আমি একটা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে উড়েছি। একটা টি-টোয়েন্টি খেলেছি, ভারতে এসেছি, জেট লেগ থাকা অবস্থায় তিন দিনের ম্যাচ খেলেছি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৫ করেছি, ২০-২৫ ওভারের বেশি বল করেছি (১৯ ওভার)। আবার বিমানে উঠেছি, রঞ্জি ট্রফির একটা ম্যাচ পুরা খেলেছি এবং শেষ দিনে চোট পেয়েছি। কে এভাবে খেলে? কেউ টানা সাত দিন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে না। আমি এতটাই নিবেদিত ছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত চোটে পড়লাম।’
তবে দুঃসময়ে সাহায্য চেয়ে পাননি ইরফান। এ নিয়ে এখনো দুঃখ আছে তাঁর মাঝে, ‘আমি এ নিয়ে এত দিন কথা বলিনি। কিন্তু চোটে পড়ার আগে এটাই হয়েছে। আমাকে “পাওয়ার হাউস” বলত সবাই। কারণ, আমি সারা দিন খেলতে পারতাম, শক্তি কোনো ব্যাপারই ছিল না আমার জন্য। কিন্তু আমার জন্যও মাঝে মাঝে বিষয়টা চাপ হয়ে যেত। মাঝে মাঝে আমি অতিরিক্ত চাপ নিয়ে নিতাম, সেটাই হয়েছিল সেবার। আমার সাহায্য দরকার ছিল। আমি সাহায্য চেয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি।’
তবে এ অভিজ্ঞতা যে তাঁকে আরও পরিণত করেছে সেটা মানেন ইরফান। কিন্তু খেলোয়াড়দের দুঃসময়ে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ ইরফান, ‘এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি। এবং এটাই আমাকে “বর্তমানের আমি” বানিয়েছে। তাই কোনো অনুশোচনা নেই। কিন্তু ফিরে তাকালে যখন কেউ বলে, খুব বেশি প্রথম শ্রেণি খেলিনি, তখন অনেকভাবেই উত্তর দেওয়া যায়। এটা বলে দেওয়া অনেক সহজ, সে কম প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছে।
- Get link
- X
- Other Apps
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment