ম্যাচ জয়ের নায়ক আরিফুলকে ঘিরে মাঠে চলল খুলনার জয়োৎসব। রাজশাহী কিংসের ড্যারেন স্যামি, মুশফিকুর রহিমরা তখন হতভম্ব।
ষোড়শ ওভারে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন বোল্ড করে দিলে ম্যাচ ঝুঁকে যায় রাজশাহীর দিকে। তখনও খুলনার প্রয়োজন ২৫ বলে ৪৪ রান। টেলএন্ডারদের নিয়ে সেই রান ছোঁয়ার চ্যালেঞ্জ নিলেন আরিফুল। তার ব্যাটে নখ কামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচে ২ উইকেটে জিতল মাহমুদউল্লাহর দল।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবারের প্রথম ম্যাচে রাজশাহীর ১৬৬ রান চার বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় খুলনা। ৭ ম্যাচে এটি তাদের চতুর্থ জয়। সমান ম্যাচে স্যামিদের পঞ্চম পরাজয়।
রান তাড়ায় শুরুতেই খুলনাকে চাপে ফেলেন মোহাম্মদ সামি। পরপর দুই ওভারে এই পেসার ফেরান চ্যাডউইক ওয়ালটন ও প্রমোশন পেয়ে তিনে নামা সিকুগে প্রসন্নকে।
রাইলি রুশোর সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ৬৭ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে খুলনা। জুটিতে অগ্রণী ছিলেন অধিনায়ক, তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন রুশো। দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনারকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
রুশোর বিদায় দিয়ে ধস নামে খুলনার ইনিংসে। ৪৮ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে দলটি।
আফিফ হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। জায়গা করে খেলতে গিয়ে হোসেন আলীর স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়কের ৪৪ বলে খেলা ৫৬ রানের ইনিংসে ৮টি চারের পাশে ছক্কা একটি।
এরপর ব্র্যাথওয়েটের সেই আউট। রাজশাহীর প্রায় মুঠোয় চলে যাওয়া ম্যাচ ছিনিয়ে আনেন আরিফুল। তার ব্যাটিং বীরত্বে জয়ের হাসিতে মাঠ ছাড়ে খুলনা। হোসেনের করা ১৮তম ওভার থেকে আসে ১৮ রান, সামির পরের ওভারে ৯ রান।
স্মিথের করা শেষ ওভারে দরকার ছিল ৯ রান। প্রথম দুই বলে ছক্কা-চারে চার বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেন আরিফুল। শেষ পর্যন্ত ১৯ বলে চারটি চার আর দুটি ছক্কায় অপরাজিত ৪৩ রানে।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ২১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া রাজশাহীর ত্রাতা স্মিথ-মুশফিক। দুই জনে ৭.১ ওভারে গড়েন ৭৬ রানের জুটি।
প্রসন্নকে পরপর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ২৯ বলে পঞ্চাশে যান স্মিথ। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে চার দিয়ে শুরু মুশফিকের চলতি আসরে প্রথম ফিফটি আসে ৩০ বলে।
একাদশ ওভারে আক্রমণে এসেই স্মিথ ঝড় থামান আফিফ হোসেন। ৩৬ বলে ৭টি চার ও চারটি ছক্কায় ৬২ রান করে স্মিথের বিদায়ের পর কমে রানের গতি।
ফিফটি পাওয়া দুই ব্যাটসম্যান স্মিথ, মুশফিকের বাইরে দুই অঙ্কে যান কেবল ফ্র্যাঙ্কলিন। তার সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি গড়ে ফিরে যান মুশফিক। ৩৩ বলে তার ৫৫ বলের ইনিংসে ৪টি চারের পাশে ছক্কা তিনটি।
দৃঢ় ভিত কাজে লাগাতে পারেননি পরের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ১০ ওভারে ৯৭ রান সংগ্রহ করা রাজশাহী শেষ ১০ ওভারে তুলে ৬৯ রান।
এবার প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেই সফল জুনাইদ। পাকিস্তানের বাঁহাতি এই পেসার ৪ উইকেট নেন ২৭ রানে। ডানহাতি পেসার জায়েদ ২৯ রানে নেন ২ উইকেট।
বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও শেষের দারুণ নৈপুণ্যে অসাধারণ এক জয় তুলে নেয় খুলনা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৬৬/৮ (স্মিথ ৬২, মুমিনুল ৫, বেল-ড্রামন্ড ০, জাকির ০, মুশফিক ৫৫, ফ্র্যাঙ্কলিন ২৯*, স্যামি ৩, মিরাজ ৩, সামি ৩, নাঈম জুনিয়র ১*; জায়েদ ২/২৯, জুনাইদ ৪/২৭, শফিউল ০/৩৫, ব্র্যাথওয়েট ১/৩৩, প্রসন্ন ০/১৫, আফিফ ১/২৩)
খুলনা টাইটানস: ১৯.২ ওভারে ১৬৮/৮ (ওয়ালটন ৪, রুশো ২০, প্রসন্ন ৬, মাহমুদউল্লাহ ৫৬, আফিফ ৫, ব্র্যাথওয়েট ১২, শান্ত ৪, আরিফুল ৪৩*, শফিউল ৫, জুনাইদ ১*; সামি ৩/২৯, হোসেন ১/৩৮, ফ্র্যাঙ্কলিন ২/৩০, মিরাজ ১/২৪, নাঈম জুনিয়র ০/২০, স্মিথ ১/২৬)
ফল: খুলনা টাইটানস ২ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: আরিফুল হক
Comments
Post a Comment