বিপিএলে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা ডায়নাইমাটসকে ৩ রানে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স। প্রথম চার ম্যাচের তিনটিই হেরে যাওয়া রংপুর দারুণ দুটি জয় পেল টানা দুই দিন।
ক্রিস গেইলের ঝড়ো ফিফটির পরও রংপুর গুটিয়ে গিয়েছিল ১৪২ রানে। শেষ ওভারে তিনটিসহ ৫টি উইকেট নেন সাকিব আল হাসান।
৯ ব্যাটসম্যান নিয়ে নামা ঢাকা রান তাড়ায় ছিল পথেই। কিন্তু শেষ সময়ে গড়বড় পাকান কাইরন পোলার্ড। দারুণ দুটি ডেলিভারিতে শেষ দুজনকে বোল্ড করে দেন পেরেরা। ঢাকা থমকে যায় ১৩৯ রানে।
শেষ দুই ওভারে মাত্র ১৩ রান দরকার ছিল ঢাকার। হাতে ছিল ৩ উইকেট, ক্রিজে ছিলেন পোলার্ড। কিন্তু ১৯তম ওভারে একটি উইকেট নিয়ে মাত্র ৩ রান দেন লাসিথ মালিঙ্গা।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ১০। পেরেরার প্রথম দুই বলে সিঙ্গেল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নিলেন না কাইরন পোলার্ড। ভরসা করতে পারেননি আরেক পাশে থাকা মোহাম্মদ আমিরের ওপর। বাড়ছে তখন চাপ। তৃতীয় বলে ফুলটস পেয়ে পোলার্ড বল পাঠান গ্যালারিতে। ম্যাচ আবারও হেলে ঢাকার দিকে।
চতুর্থ বলে আবারও সিঙ্গেল নেওয়ার সুযোগ পেয়ে নিলেন না পোলার্ড। পঞ্চম বলে দারুণ এক ইয়র্কারে তিনি বোল্ড। শেষ বলে স্কুপ করতে গিয়ে আরেকটি ইয়র্কারে বোল্ড আবু হায়দার। বাঁধনহারা উল্লাসে মাতল রংপুরের ক্রিকেটাররা।
১৪৩ রানের মাঝারি লক্ষ্য কঠিন করে তুলেছিল ঢাকার ব্যাটসম্যানরাই। বড় ইনিংস নেই কারও। ৩০ রানও করতে পারেননি কেউ।
আগের ম্যাচে ৭৬ রান করা সুনিল নারাইনকে প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন মাশরাফি। আরেক পাশে নতুন বল নেওয়া সোহাগ গাজীর বলে বোল্ড তিনে নামা সাকিব।
তৃতীয় উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন এভিন লুইস ও জহুরুল ইসলাম। আক্রমণে ফিরে সেই সোহাগ ও মাশরাফিই ফেরান এই দুজনকে।
এরপর মেহেদি মারুফ, আফ্রিদিরা রান পেলেও কেউ টানতে পারেননি দলকে। আটে নামা পোলার্ডের ব্যাটে তাকিয়ে ছিল ঢাকা। কিন্তু নায়ক হতে হতেও শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলেন তিনি খলনায়ক!
রংপুরের ইনিংস বড় হতে পারত আরও। ইনিংসটিকে পরিষ্কার দুটো ভাগে আলাদা করা যায়। গেইল উইকেটে থাকার সময় ও পরে। গেইল যতক্ষণ ছিলেন, রংপুরের স্কোরবোর্ড ছিল আলোর রোশনাই। গেইলের বিদায়ের পর সেই ইনিংসই জ্বলল কেবল মিটমিট করে।
ইনিংসের শুরুতেই একবার জীবন পান গেইল। দ্বিতীয় ওভারে সুনিল নারাইনের বলে সহজ ক্যাচ ছাড়েন আবু হায়দার রনি। গেইলের রান তখন ৭।
অষ্টম ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনের বলে সেই আবু হায়দারের হাতেই ধরা পড়েছেন গেইল। এই ব্যাটিং দানব উইকেটে থাকলে যা হয়, মাঝের সময়টাতে হয়েছে সেটিই। বয়ে গেছে ঝড়।
সেই নারাইনকেই দুই চার এক ছক্কা মেরেছেন পরপর তিন বলে। মোহাম্মদ আমিরকে উড়িয়েছেন এক্সট্রা কাভার দিয়ে। শহিদ আফ্রিদিকে ছক্কা মেরে ২৬ বলে স্পর্শ করেছেন টানা দ্বিতীয় পঞ্চাশ।
যে বলে আউট হলেন, সেটিও তার পাঠানোর কথা গ্যালারিতে। মোসাদ্দেকের বাজে এক বল তুলে দিলেন মিড উইকেটে। ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২৮ বলে ৫১।
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম গেইলকে ছেড়ে গেছেন তার আগেই। আফ্রিদির প্রথম বলেই সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড ৬ রানে।
গেইলের সৌজন্যে এরপরও ৭ ওভারে রান ছিল ৭১। গেইলের বিদায়ের পর উল্টোরথের যাত্রী রংপুরের ইনিংস।
শাহরিয়ার নাফীস ব্যর্থ আরও একবার। আবারও থিতু হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন।
রানের গতি বাড়াতে পাঁচে নামেন মাশরাফি। সফলও হন কিছুটা। আফ্রিদিকে ছক্কাসহ ১১ বলে ১৫। কিন্তু শেষে ঝড় তোলার দায়িত্ব ছিল যাদের, তারা ছিলেন মিইয়ে।
৯ বলে ১৫ করে শেষ থিসারা পেরেরা। ১৬ বল খেলে বাউন্ডারির খোঁজ পাননি রবি বোপারার। জিয়াউর রহমানের ব্যাটেও ভাটা।
শেষ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে অলআউট রংপুর। বোপারা রান আউট, বাকি তিনটিই নিজের করে নিয়ে সাকিব পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। শেষ ৫ ওভারে রংপুর তুলতে পারে মাত্র ২১ রান।
মাঝ বিরতিতে রানটাকে মনে হচ্ছিলো অপ্রতুল। কিন্তু অসাধারণ বোলিং আর মাশরাফির দুর্দান্ত নেতৃত্বে জিতল রংপুরই। ম্যাচ শেষে যখন স্তব্ধ ঢাকার ড্রেসিংর রুম, রংপুরের ক্রিকেটাররা তখন মাঠে গোল হয়ে করছে আনন্দনৃত্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ১৯.৫ ওভারে ১৪২ (গেইল ৫১, ম্যাককালাম ৬, মিঠুন ২২, শাহরিয়ার ৯, মাশরাফি ১৫, বোপারা ১২, থিসারা ১৫, জিয়াউর ৪, মালিঙ্গা ১*, সোহাগ ০, রুবেল ০; আবু হায়দার ০/৯, নারাইন ০/২৯, আমির ১/৩৪, আফ্রিদি ২/৩৯, মোসাদ্দেক ১/৪, সাকিব ৫/১৬, পোলার্ড ০/৬)
ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৩৯ (লুইস ২৮, নারাইন ০, সাকিব ১১, জহুরুল ২৯, মোসাদ্দেক ২, মারুফ ১৫, সাঙ্গাকারা ২৮, আফ্রিদি ২১, পোলার্ড ১২, নাদিফ ২, আমির ০*, আবু হায়দার ০; মাশরাফি ২/৩০, সোহাগ ২/১৮, মালিঙ্গা ১/২০, রুবেল ২/২৯, থিসারা ২/৩৭)।
ফল: রংপুর রাইডার্স ৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ক্রিস গেইল
Comments
Post a Comment