Skip to main content

ঘুরে দাঁড়াতেই হবে

একজন কয়েদির গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। কয়েদি নম্বর ৪৬৬৬৪। মাত্র নয় বছর বয়সে বাবাকে হারান। মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই করতে গিয়ে ১৯৬৪ সাল থেকে ২৭ বছর কারাগারে কাটান। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই তিনি দূরশিক্ষণের মাধ্যমে আইনে ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯০ সালে মুক্তির পর ১৯৯৩ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি আফ্রিকার সাধারণ মানুষের প্রিয় নেতা ‘মাদিবা’; নেলসন ম্যান্ডেলা, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। শাসক দলের অত্যাচার, দীর্ঘ কারাভোগ কোনো কিছুই তাঁকে সংকল্প থেকে টলাতে পারেনি, হোঁচট খেতে খেতে বারবার তিনি মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন ‘আমার সফলতার ভিত্তিতে আমাকে বিচার করো না, আমার বিচার করো আমার ব্যর্থতা এবং ব্যর্থতার পর ঘুরে দাঁড়ানোর ভিত্তিতে।’
 
ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়েই মানুষ তার সবল অস্তিত্বকে জানান দেয়, ভীরুতা আর কাপুরুষতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। প্রকৃতি চায় মানুষ সব সময় সামনে এগিয়ে চলুক। পেছনের ব্যর্থতার গ্লানি যেন তাকে থামিয়ে না দেয়, হতাশা যেন তাকে শ্লথ করে না ফেলে। প্রকৃতিগতভাবেই মানুষের জন্ম এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তুচ্ছ মাছি তার হাজার চোখের পূঞ্জাক্ষী নিয়ে চারপাশের সবকিছু ৩৬০ ডিগ্রি দেখতে পায়, গৃহপালিত চতুষ্পদেরা মাথার দুদিকে চোখ থাকার কারণে প্রায় ৩০০ ডিগ্রি দেখতে পায় আর প্রকৃতি মানুষকে পাশাপাশি দুটি চোখ দিয়ে মাত্র ১৮০ ডিগ্রি দেখার ক্ষমতা দিয়েছে! সামনে ছাড়া অন্য কোনো দিকে—পাশে বা পেছনে আমরা দেখতে পাই না। এর অর্থ আমরা যেন পেছন ফিরে না চাই, আমাদের চলা যেন হয় কেবলই সামনের দিকে। সামনে চলতে গেলে সব সময় এক গতিতে চলা যায় না, কখনো হোঁচট খেতে হয়, কখনো থামতে হয় কিন্তু দিন শেষে সামনে যেতেই হবে।
এই সামনে চলার জন্য জীবনের গতিকে চালু রাখতে পড়ে গেলে উঠে দাঁড়াতে হলে আমাদের মনকে তৈরি করতে হবে। মন প্রস্তুত করতে হলে আমাদের জানতে হয় মন কী রকম। স্নায়ুবিদেরা বলতে পারেন মন থাকে মস্তিষ্কে, আর মস্তিষ্ক থাকে আমাদের মাথায়। হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞরা হয়তো বলবেন, হৃৎপিণ্ডই মন আর হৃৎপিণ্ড থাকে বুকে! অর্থনীতিবিদেরা বলতে পারেন মন থাকে টাকায় আর টাকা থাকে পকেটে! কবিরা বলেন মন থাকে হৃদয়ে আর হৃদয় থাকে আরেকজনের কাছে! যদি জিজ্ঞেস করি কেউ মন দেখেছেন কি না, সবাই বলবেন কেউ দেখেননি—এই অদেখা মনকে তুলনা করা যায় নদীর সঙ্গে। নদীর যেমন কূল ভাঙে, মনও তেমনি ভাঙে। নদীতে যেমন চর পড়ে মনও তেমনি শুকিয়ে যায়, নদীতে যেমন ঝড় হয়, মনেও তেমনি ঝড় হয়। এই মনকে ঘুরে দাঁড়ানো বহমান নদীর মতো করতে হলে আমাদের দক্ষ হতে হবে।
 
এর জন্য প্রথমেই দরকার নিজের মধ্যে একটা শক্তির স্তর তৈরি করা। কখনোই নিজেকে শক্তিহীন উদ্যমহীন মনে করা চলবে না। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। মনে রাখতে হবে মানুষের বুদ্ধি সবচেয়ে বেশি। এই বুদ্ধির সঙ্গে আবেগের যথাযথ সংমিশ্রণ ঘটাতে পারলে একজন মানুষ সহজে ভেঙে পড়ে না।
 
আমাদের চলমান জীবনের সবটাই স্বপ্নে ভরা নয়। আমরা আনন্দে খুশি হই, বেদনায় কাতর হই। কিছু থাকে সফলতা আবার কিছু ব্যর্থতা। আমরা যদি সব সময় ব্যর্থতাকে আঁকড়ে ধরে থাকি, তবে সফলতা প্রবেশ করতে পারে না। সফলতাকে জায়গা করে দিতে ব্যর্থতার চিন্তা মন থেকে সরাতেই হবে। ছোটবেলা থেকেই ব্যর্থতা মেনে নিয়ে নতুন করে শুরু করার অভ্যাস রাখতে হবে। এ জন্য শিশুদের কখনোই লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া যাবে না, এতে করে তারা সামান্য ব্যর্থতাকে গ্রহণ করতে পারবে না, সহজেই ভেঙে পড়বে। শিশুদের ব্যর্থতাগুলোকেও উদ্যাপন করা শেখাতে হবে, তাহলে তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।কারও মধ্যে যখন সামাজিক দক্ষতাগুলো কমে যায়, যখন সে নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকে তখন সে নিজেকে অনেক ছোট মনে করে। উদ্যম নিয়ে পুনরায় নতুন করে শুরু করতে পারে না। এ জন্য সামাজিকভাবে তাকে দক্ষ হতে হবে। সামাজিকভাবে দক্ষ হলে মনের ওপর চাপ কম পড়ে, মন সুস্থ থাকে। ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধিক সময় ব্যয় না করে বাস্তব সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে সক্রিয় অংশ নেওয়া প্রয়োজন। তাহলেই সামাজিক দক্ষতা বাড়বে, ইতিবাচক চিন্তা করার সক্ষমতা তৈরি হবে এবং কখনোই হাল ছেড়ে দেবে না। সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া তার জন্য সহজ হবে।
জীবনের মুক্তোদানাগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের দেখার শক্তি, শোনার শক্তি, ঘ্রাণের শক্তি, অনুভবের শক্তি, হাস্যরসের শক্তি আর ভালোবাসার শক্তির মতো মুক্তোগুলোকে যেন সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় সে জন্য এসবকে বড় করে দেখতে হবে।
 
পাঠ্যবই বা অফিসের দরকারি ফাইলপত্রের বাইরে প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়ুন। বাড়িতে একটি ছোট পারিবারিক পাঠাগার এই পড়ার অভ্যাস তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। এর পাশাপাশি নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা, সংগীত, ছবি আঁকা, নাচ করা আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, কলহ, মাদকের নেশা, অনিয়ন্ত্রিত রাগ, অহেতুক হিংসা-কুটিলতা, অন্যায্য শক্তি প্রয়োগ করে নিজের মতো প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, পেশাজীবনে অনৈতিকতার চর্চা ইত্যাদি নিজের ও পরিবারের সদস্যদের মনে বাড়তি চাপ তৈরি করে। এটা প্রকারান্তরে আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। এ বিষয়গুলোকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি আত্মকেন্দ্রিকতা ও ব্যক্তিত্বের বিকার থেকে রক্ষা পেতে প্রযুক্তিতে আসক্ত না হয়ে যৌক্তিকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। কেননা, সামনে এগিয়ে যেতে হলে প্রযুক্তির বিকল্প নেই। জুজুর ভয়ে প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকাও চলবে না।
 
সামনে যাই আসুক না কেন সমস্যাকে এড়িয়ে চলা যাবে না। সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে, আত্মসমালোচনা জরুরি কিন্তু তাই বলে নিজেকে ছোট তুচ্ছ বা হীন ভাবা চলবে না। ছোট ছোট সিদ্ধান্তু নেওয়ার চর্চা ছেলেবেলা থেকেই করতে হবে। তাহলে আসল কাজের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। সব সময় অন্যের ওপর নির্ভর করবেন না।
 
জগতে যাঁরা বড় হয়েছেন তাঁরা কখনোই হতাশার কাছে পরাজিত হননি। সাহসে ভর করে নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে ঠিকই এগিয়ে গেছেন। স্টিভ জবস, যাঁর থাকার কোনো ঘর ছিল না, বন্ধুদের ঘরের মেঝেতে ঘুমাতে হতো—ব্যবহৃত কোমল পানীয়ের বোতল ফেরত দিয়ে পাঁচ সেন্ট করে আয় করতেন, যেটা দিয়ে খাবার কিনতেন। প্রতি রোববার রাতে তিনি সাত মাইল হেঁটে ইসকন মন্দিরে যেতেন শুধু একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য—তিনিই হয়েছিলেন অ্যাপল কম্পিউটারের জনক। রুটির দোকানে কাজ করা দুখু মিয়া হয়েছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এই উদাহরণগুলো মাথায় রেখে আমাদের সাহসী হতে হবে। আত্মবিশ্বাসী হয়ে আমাদের জীবনের সব মুক্তোদানাকে কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।

Comments

Popular posts from this blog

রোনালদো জিতবেন ব্যালন ডি’অর, নাইকির আর সইছে না তর!

প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে আজ বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে নয়টায় শুরু হবে ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠান। কে জিতবেন ‘ফ্রান্স ফুটবল’-এর এবারের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার? স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মুন্দো দেপোর্তিভো’ আগেই জানিয়েছে, ব্যালন ডি’অর-জয়ীর নাম ফাঁস হয়ে গেছে! ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকিও জানে সেই বিজয়ীর নাম। আর তাই এবারের বর্ষসেরা খেলোয়াড়টির অর্জনের স্মারক হিসেবে নাইকি সীমিতসংখ্যক বুট তৈরি করেছে, যার নাম ‘কুইন্টো ট্রাইয়ুনফো’, মানে ‘পঞ্চম সাফল্যে বিশেষ সংস্করণ’। বোঝাই যাচ্ছে, পুরস্কারটি কার হাতে উঠতে যাচ্ছে। লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর শোকেসে ট্রফির সংখ্যা যাদের জানা, তাদের এটা সহজেই বোঝার কথা। মেসি ইতিমধ্যেই পাঁচবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। রোনালদো আজ আইফেল টাওয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে ডেভিড জিনোলার হাত থেকে ট্রফিটা পেলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর পাশে বসবেন। ইউরোপের সংবাদমাধ্যম কিন্তু আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছে, এবার ট্রফিটা রোনালদোর হাতেই উঠছে। নাইকির বিশেষ সংস্করণের বুট সংবাদমাধ্যমের এই নিদানের ভিত্তিকে আরও শক্ত করল। নাইকির সঙ্গে স্পনসর চুক্তি রয়েছে রোনালদোর। রিয়াল মা...

Category «পরকিয়া চোদন কাহিনী

Bangla choti golpo রবির বয়স তখন ১৫ যখন সে কমলা আর ওর স্বামীর সাথে ওদের গ্রামের বাড়িতে থাকতে আসে।রবির বাবা-মা দুজনেই একটা দুর্ঘটনাতে মারা যান।ওদের বাড়িতে আগুন লাগে ,guda agun সেই আগুনে ওদের গোটা বাড়ি আর ওনারা জ্বলে ছাই হয়ে যান।কমলার বোন ছিল রবির মা।একমাত্র পরিবার বলতে কমলা choti মাসিই,তাই সে ওদের কাছে চলে আসে।jotil bangla choti শুরুর দিকে রবি একদম চুপচাপ থাকত,নিজের মনেই খেলা করত, কারো সাথে সেমন কথা বলতো না।পরিবারের শোকে তো এরকমই হওয়ার কথা,নিজের বাড়ির কথা হয়তো ওর খুব মনে পড়তো। রবির ১৭ বছর এর জন্মদিনের এক সপ্তাহের মাথায় কমলার স্বামী রাকেশ মারা যায়।মাঠে লাঙ্গল চালাতে গিয়ে একটা আঘাতে ওনার মৃত্যু হয়।হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সে প্রাণ হারায়।কমলা তখন ৩২ বছরের যুবতি বিধবা, এমনকি রবির মন থেকেও আগের শোকটা মুছে যায়নি। কমলার ভাগ্য ভালো যে রবি তখন তার কাছে ছিলো তাই তাকে তার জমি জায়গা হারাতে হয়নি।তার গড়ন ভালো ছিলো,চাষেবাসে মনও তার ছিলো,সারা বছরের ফসলে তাদের গুজরান হয়ে যেত।বাড়ন্ত বয়েসে খাটাখাটুনির জন্য আরো পেটানো হয়ে যায় রবির শরীর,পেশিতে দৃঢ় তার বাহু।আঠারো বছর পেরিয়ে তাগড...

কী ঘটেছিল খেলার শেষ মুহূর্তে?

ম্যাচের শেষ ওভারে পরপর দুটি বাউন্সার। অথচ নো বল দেননি আম্পায়ার! পরে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের কাছে জানা গেল, লেগ আম্পায়ার নো দিতে গিয়েও দেননি! ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ আম্পায়ারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও সমাধান পাননি। বাংলাদেশ দল এটিকে ‘পক্ষপাতমূলক’ আম্পায়ারিং হিসেবে ধরে নিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তো সতীর্থদের মাঠ থেকেই বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ঘটনা খুব বেশি দেখা যায় না। কী এমন হয়েছিল যে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা উত্তেজিত হয়ে পড়লেন! টিম হোটেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে সেই সময়ের একটা চিত্রনাট্য দাঁড় করিয়েছেন এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কায় অবস্থান করা  প্রথম আলো র প্রতিনিধি  রানা আব্বাস ... মাহমুদউল্লাহ (লেগ আম্পায়ার রুচিরা পালিয়াগুরুগেকে):  স্যার, এটা কেন নো বল নয়? পরপর দুটি বাউন্সার দিল! পরেরটার উচ্চতা আরও বেশি ছিল...। (দুই আম্পায়ার কথা বলছেন মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে। গ্যাটোরেড হাতে ব্যাটসম্যানদের কাছে এলেন একাদশের বাইরে থাকা নুরুল হাসান। এ সময় থিসারা পেরেরা সিংহলিজ ভাষায় কিছু বললেন আম্পায়ারদের।) থিসারা (মাহমুদউল্লাহ...