জীবনে চলতে-ফিরতে যেসব আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, পাঠকের উকিল বিভাগে তারই সমাধান পাওয়া যাবে। এ বিভাগে আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাহিদ মাহতাব। স্পষ্ট করে নিজের সমস্যা লিখে পাঠান। প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি দিন। খামের ওপর লিখুন: পাঠকের উকিল, নকশা, দৈনিক প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা। এ ছাড়া naksha@prothom-alo.info এই ঠিকানায় ই-মেইল করেও সমস্যার কথা জানাতে পারেন।
আমরা তিন বোন। কোনো ভাই নেই। আমার বাবা তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আমাদের তিন বোন ও মায়ের নামে লিখে দিতে চান। এখন তিনি কীভাবে লিখে দেবেন? আর দেওয়ার পর কী আমার চাচাতো ভাইয়েরা সেই সম্পত্তিতে কোনো অধিকার দেখাতে পারবে? আফসানা রহমান, টাঙ্গাইল।
আপনার পিতা তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি আপনাদের নামে হেবা (গিফট) করতে পারেন। সম্পত্তি হস্তান্তর হলে পরবর্তী সময়ে চাচাতো ভাইদের কোনো অধিকার থাকবে না। তবে এই হেবা অবশ্যই রেজিস্টার্ড হেবা হতে হবে। আপনার বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে চাচাতো ভাইদের কোনো দাবি থাকবে না।
১৮ বছর আগের কথা। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়। উত্তরা থানায় অজ্ঞাতনামা মামলা হয়। এরপর অনেক ঘোরাঘুরি করি, কিন্তু শেষ ফলাফল শূন্য। অর্থাৎ, এফআইআর দাখিল করে কোনো আসামিকে ধরা যায়নি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট বলছে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি নতুন করে বিচার পেতে গেলে কী করতে হবে? মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
এফআইআর (ফাইনাল রিপোর্ট) আদালত গ্রহণ করেছিলেন কি না, সেই ব্যাপারটি আপনার চিঠিতে পরিষ্কার নয়। ফৌজদারি মামলায় তামাদির বিষয়টি আসে না। সুতরাং ফাইনাল রিপোর্টের বিরুদ্ধে আপনি না-রাজি আবেদন নিতে পারেন। তবে ফাইনাল রিপোর্ট গ্রহণ করে ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ প্রদান করলে আপনি তাঁর বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যেতে পারেন। সুতরাং, এই মামলায় আপনার ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব।
এফআইআর (ফাইনাল রিপোর্ট) আদালত গ্রহণ করেছিলেন কি না, সেই ব্যাপারটি আপনার চিঠিতে পরিষ্কার নয়। ফৌজদারি মামলায় তামাদির বিষয়টি আসে না। সুতরাং ফাইনাল রিপোর্টের বিরুদ্ধে আপনি না-রাজি আবেদন নিতে পারেন। তবে ফাইনাল রিপোর্ট গ্রহণ করে ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ প্রদান করলে আপনি তাঁর বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যেতে পারেন। সুতরাং, এই মামলায় আপনার ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব।
আমি আমার মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। আমার মা ২০০৮ সালে মারা যান। আমার বাবা গত সেপ্টেম্বর মাসে মারা যান। আমার দাদা-দাদি জীবিত আছেন। গ্রামে আমার দাদার কিছু জমি আছে, যা তিনি আমার নামে হেবা দলিল করে দিতে চান। হেবা দলিল করার জন্য কী কী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে তা জানতে চাই। আমার বাবার কোনো আপন ভাইবোন নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা।
আপনার দাদা তাঁর জীবদ্দশায় রেজিস্টার্ড হেবা দলিলের মাধ্যমে তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি আপনাকে দান করতে পারেন। এই দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর ও দখল প্রদান করা হলে এই সম্পত্তির মালিক হবেন আপনি। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো অংশীদারের কোনো দাবি থাকবে না।
আপনার দাদা তাঁর জীবদ্দশায় রেজিস্টার্ড হেবা দলিলের মাধ্যমে তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি আপনাকে দান করতে পারেন। এই দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর ও দখল প্রদান করা হলে এই সম্পত্তির মালিক হবেন আপনি। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো অংশীদারের কোনো দাবি থাকবে না।
আমার যখন বিয়ে হয়, তখন আমার বয়স ছিল কম। বিয়ের এক বছর পর আমাদের একটি কন্যাসন্তান হয়। আমাদের বিয়ের কাবিন ছিল ৩ লাখ টাকা। মেয়ের জন্মের পর আমাদের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়। তারপর আমার স্বামী অন্য এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। তখন সে চালাকি করে আমাদের বাসায় উকিল নোটিশ বলে একটি চিঠি পাঠায়। আমার বাবা সহজ-সরলভাবে সেই চিঠি সই করে রেখে দেয়। তারপর আমি ওই চিঠি খুলে দেখি ওটা তালাকনামার প্রথম চিঠি। তখন আমরা আইনের সাহায্য চাই। আইন বলে আমাদের তালাক হয়ে গেছে, কিন্তু আমি ওই কাগজে সই করিনি। আমার দেনমোহর ও আমার সন্তানের ভরন-পোষণ দেয়নি, তাহলে কি আমি আমার বিচার পাব না? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
তালাকের নোটিশ দেওয়ার তিন মাস পর তালাকটি কার্যকর হয়। আপনার সঙ্গী যেহেতু তালাক প্রদান করেছেন, সেহেতু আপনার দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা কম। আপনি দেনমোহর ও আপনার মেয়ের ভরণ-পোষণ চেয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করবেন। তালাক চলাকালীন তিন মাস সময়ের ভরণ-পোষণের অর্থ নির্ধারিত হবে আপনার স্বামীর অর্থনৈতিক সচ্ছলতার ওপর ভিত্তি করে।
আমার মা ও মামারা তিন ভাই, চার বোন। নানার অনেক সম্পত্তি আছে। মামারাও ভালো অবস্থানে আছেন। এক মামা সুইডেনে থাকে। তিনি আর দেশে আসতে পারবেন না অসুস্থতার কারণে। কিন্তু কিছুদিন আগে আমার খালাম্মারা সবাই সামান্য কিছু জমি রেখে মামাদের না দাবি দলিল দিয়ে দেন। এখন সুইডেনে থাকা মামা বলছেন, তাঁর যত সম্পত্তি আছে, তা সব ভাইবোন যেন সমান ভাগে পায়। কীভাবে দেওয়া যেতে পারে? তিনি দেশে আসা ছাড়া এটা সম্ভব কি? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আপনার মামা ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ বলে তাঁর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অবশ্যই রেজিস্টার্ড হতে হবে। যেহেতু তিনি প্রবাসী, তাই বাংলাদেশ দূতাবাস এবং পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উক্ত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সত্যায়িত করতে হবে। সত্যায়িত পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি মামার পক্ষে সম্পত্তি আপনাদের হস্তান্তর করতে পারেন।
আপনার মামা ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ বলে তাঁর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অবশ্যই রেজিস্টার্ড হতে হবে। যেহেতু তিনি প্রবাসী, তাই বাংলাদেশ দূতাবাস এবং পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উক্ত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সত্যায়িত করতে হবে। সত্যায়িত পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি মামার পক্ষে সম্পত্তি আপনাদের হস্তান্তর করতে পারেন।
আমি আমার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাসাবো এলাকার একটি বাড়িতে বসবাস করতাম। একদিন আমার অনুপস্থিতিতে সন্তানদের হত্যা করা হয় এবং সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত আমার স্ত্রী বাসা থেকে পালিয়ে যায়। পরে সবুজবাগ থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর সে প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে এবং পরে রিমান্ডে থাকাকালীন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করে। সে বর্তমানে কারাগারে হাজতি হিসেবে বন্দী আছে। আমি তার সঙ্গে দুবার দেখা করতে গিয়েছি। সে আমাকে বলেছে, আমি যেন অন্যত্র বিয়ে করে ফেলি। উল্লেখ্য, সে আনুমানিক পাঁচ বছর যাবৎ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসকেরব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সে নিয়মিত ওষুধ সেবন করত। আমরা অনেক সুখী ছিলাম। সে আমার প্রতি এবং সন্তানদের প্রতি যথেষ্ট যত্নবান ছিল। আমরা উভয়কে সম্মান করতাম ও ভালোবাসতাম। আমার প্রশ্ন, এখন আমি যদি আবার বিয়ে করতে চাই, তাহলে কোনো আইনি বাধা রয়েছে কি না। বিয়ে করার ক্ষেত্রে তাকে তালাক দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি? মো. মাহবুবুর রহমান, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
আপনি আপনার স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে নির্ধারিত সময়ের পরে তালাক দিতে পারেন। তালাকের নোটিশ স্থায়ী ঠিকানা ও কারাগারে পাঠাতে হবে। কারাগারে অবস্থান করলেও আপনার স্ত্রী উকিলের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে হাজির হতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বিয়েতে কোনো আইনি বাধা থাকবে না। প্রথম স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে আবার বিয়ে করাই সমীচীন। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া পুনরায় বিবাহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
- Get link
- X
- Other Apps
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment