Skip to main content

ধর্ষণে নারীর দোষ কতটা?

ভারতে যে নারীরা ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতার শিকার, তারা সাম্প্রতিককালে তাদের ওপর ঘটা নির্যাতন নিয়ে আরো বেশি করে মুখ খুলছেন ঠিকই - কিন্তু দেশের ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম তাদের জন্য আদৌ সুবিচার নিশ্চিত করতে পারছে না বলেই অভিমত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের।
বুধবার দিল্লিতে ওই সংস্থার প্রকাশিত এক রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ভারতে ধর্ষিতা নারী বা ভিক্টিমের ঘাড়েই যাবতীয় দোষ চাপানোর সংস্কৃতি এখনও প্রবল। আর তাই তার প্রতিকার এখনও ভিক্টিমের নাগালের বাইরেই রয়ে যাচ্ছে।
হলিউডে হার্ভে ওয়েনস্টেইন বা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি-দের যৌন কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে ভিক্টিমরা যেভাবে এগিয়ে আসছেন, ভারতে সে রকমটা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধাই হলো সমাজ, আর পুলিশ বা আদালতের এই মানসিকতা।
গত বছরের মে মাসে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন বছর তিরিশের ধন্যেশ্বরী (নাম পরিবর্তিত)।
দুপুরবেলায় ডাক্তার দেখিয়ে নির্জন বাসস্ট্যান্ডে তিনি যখন অপেক্ষা করছেন, তখন তিনজন ব্যক্তি মিলে তাকে ধর্ষণ করে।
আজ দিল্লির ইন্ডিয়া হ্যাবিট্যাট সেন্টারে এসে ওই নারী বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ লেখাতে গেলে সকাল নটা থেকে সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত তাকে বসিয়ে রাখা হয়।
এর মধ্যে অভিযুক্তদের একজনের ফোন চলে আসায় পুলিশ আর সেদিন এফআইআর নেয়নি।
পরদিন যখন আবার তিনি অভিযোগ লেখাতে থানায় যান, তখন ধর্ষণের কথা বাদ দিয়ে লেখা হয় 'মারপিট আর হাতাহাতি' হয়েছে।
ঠিক এই কারণেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ভারতে হয়তো ধর্ষণ রিপোর্ট করার ঘটনা বেড়েছে - কিন্তু তার প্রতিকার ভিক্টিমের নাগালের বাইরেই রয়ে যাচ্ছে।
ওই মানবাধিকার সংগঠনের জয়শ্রী বাজোরিয়া, যিনি রিপোর্টটির মূল প্রণেতা, তিনি তাই বলছিলেন, "নির্যাতন নীরবে সয়ে যাওয়ার রেওয়াজ হয়তো বন্ধ হয়েছে - কিন্তু পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থা, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইন বিভাগ কেউই সেই ভিক্টিমের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না।"
"ফরেনসিক সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ, ভিক্টিমের সাইকো-সোশ্যাল বা লিগ্যাল কাউন্সেলিং - এগুলো দুচারটে বড় শহরের বাইরে অধরাই থেকে যাচ্ছে।"
এমন কী দিল্লির একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, যৌন লাঞ্ছনার শিকার সাবাহ-র অভিজ্ঞতাও ছিল মর্মান্তিক।
তিনি জানাচ্ছেন, "আমাকে চারবার জবানবন্দি রেকর্ড করাতে হয়েছে। সবচেয়ে খারাপটা ছিল যখন পুলিশের উর্দিতে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী কর্মকর্তা হোস্টেলে এসে হাজির হন, আর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন পুরুষ অফিসারের সামনে আমাকে পুরো ঘটনা আবার বলতে হয়।"
"বারবার জিজ্ঞেস করা হতে থাকে কেন একা বেরিয়েছিলাম, কেন সঙ্গে পুরুষ কেউ ছিল না ইত্যাদি ইত্যাদি। যেন পরীক্ষা নেয়া হচ্ছিল, আমার চরিত্র কেমন!"
তবে হলিউডে বা ওয়েস্টমিনস্টারে যেভাবে ক্ষমতাবান নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে মুখ খোলা শুরু হয়েছে, ভারতেও সেটা কিন্তু একেবারে অসম্ভব নয় বলেই বিশ্বাস করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার।
বিবিসি বাংলাকে মিস গ্রোভার বলছিলেন, "এই ধরনের অপরাধ যে হচ্ছিল না তা তো নয়, চিরকালই হচ্ছিল এবং আড়ালে ছিল। কিন্তু এখন সারা বিশ্ব জুড়েই এই উপলব্ধিটা তৈরি হয়েছে যে এটা একটা অপরাধ। প্রায় সব পেশাতে ক্ষমতার শীর্ষে যে পুরুষরা, তারা বহুদিন ধরে এই অপরাধটা করে আসছেন।"
"এখন এর যে জবাবটা আসছে তাতেও একটা প্যাটার্ন আছে - যখন একজন মহিলা সাহসে ভর করে এর প্রতিবাদ করছেন, তখন অন্যরাও কিন্তু মুখ খোলার ভরসা ও শক্তি পাচ্ছেন। তার জন্য হয়তো অনেক বছর লেগে যাচ্ছে, কিন্তু অপরাধটা তাতে মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে না।"
তাই এই বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারতে বলিউড বা রাজনৈতিক ক্ষমতার অলিন্দেও হয়তো এ ধরনের কন্ঠস্বর একদিন শোনা যাবে - কিন্তু সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে সবার আগে বন্ধ করতে হবে 'ভিক্টিম ব্লেমিং'।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলিও যেমন মনে করেন ধর্ষিতাকেই আগে দোষারোপ করাটা যেন ভারতের মজ্জায় ঢুকে আছে।
তিনি বলছিলেন, "যৌন সহিংসতার বেশির ভাগ কেসে নির্যাতনকারীরা হয় ভিক্টিমের চেনা বা পরিচিত। আর ভারতে তার অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ ভিক্টিমকে বলে থাকে নিশ্চয় তোমাদের কোনও সেটিং ছিল - কিংবা আসলে এটা তোমারই দোষ!"
"দিল্লির নির্ভয়া ধর্ষণকান্ড, যেখানে সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তিরা ভিক্টিমরা বাসস্ট্যান্ড থেকে তুলে নিয়ে যায়, সে সব ক্ষেত্রে হয়তো পুলিশ তবু কিছুটা মানতে চায়। তবু কিন্তু প্রশ্ন হয়, রাত্তিরবেলা কেন ওখানে ছিলে, কী করছিলে, কে সঙ্গে ছিল বা কী পোশাক পরে ছিলে ইত্যাদি ইত্যাদি।"
"একজন ভিক্টিম তো আমাদের বলেই ফেলল, যা-ই আমরা করি, দোষ শেষ পর্যন্ত আমাদেরই দেওয়া হয়!"
"এই কারণেই আমরা তার কথা ধার করে প্রতিবেদনটির নামই রেখেছি 'এভরিওয়ান ব্লেমস মি' - অর্থাৎ, আমাকেই সবাই দোষ দেয়", বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মিস গাঙ্গুলি।
মেয়েরা ছোট কাপড়চোপড় পরেই ছেলেদের যৌনতায় প্ররোচিত করে বলে ভারতে যারা যুক্তি দেন, তাদের উদ্দেশেও আজ প্রশ্ন তুলেছে গ্রামের এক ধর্ষিতা গৃহবধূ কাজল।
তিনি বলছেন, "আমি তো কোনো দিন ছোট কাপড় পরিইনি, তার পরও তো আমার ওপর অত্যাচার হলো, তাই না?"

Comments

Popular posts from this blog

রোনালদো জিতবেন ব্যালন ডি’অর, নাইকির আর সইছে না তর!

প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে আজ বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে নয়টায় শুরু হবে ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠান। কে জিতবেন ‘ফ্রান্স ফুটবল’-এর এবারের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার? স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মুন্দো দেপোর্তিভো’ আগেই জানিয়েছে, ব্যালন ডি’অর-জয়ীর নাম ফাঁস হয়ে গেছে! ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকিও জানে সেই বিজয়ীর নাম। আর তাই এবারের বর্ষসেরা খেলোয়াড়টির অর্জনের স্মারক হিসেবে নাইকি সীমিতসংখ্যক বুট তৈরি করেছে, যার নাম ‘কুইন্টো ট্রাইয়ুনফো’, মানে ‘পঞ্চম সাফল্যে বিশেষ সংস্করণ’। বোঝাই যাচ্ছে, পুরস্কারটি কার হাতে উঠতে যাচ্ছে। লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর শোকেসে ট্রফির সংখ্যা যাদের জানা, তাদের এটা সহজেই বোঝার কথা। মেসি ইতিমধ্যেই পাঁচবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। রোনালদো আজ আইফেল টাওয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে ডেভিড জিনোলার হাত থেকে ট্রফিটা পেলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর পাশে বসবেন। ইউরোপের সংবাদমাধ্যম কিন্তু আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছে, এবার ট্রফিটা রোনালদোর হাতেই উঠছে। নাইকির বিশেষ সংস্করণের বুট সংবাদমাধ্যমের এই নিদানের ভিত্তিকে আরও শক্ত করল। নাইকির সঙ্গে স্পনসর চুক্তি রয়েছে রোনালদোর। রিয়াল মা...

Category «পরকিয়া চোদন কাহিনী

Bangla choti golpo রবির বয়স তখন ১৫ যখন সে কমলা আর ওর স্বামীর সাথে ওদের গ্রামের বাড়িতে থাকতে আসে।রবির বাবা-মা দুজনেই একটা দুর্ঘটনাতে মারা যান।ওদের বাড়িতে আগুন লাগে ,guda agun সেই আগুনে ওদের গোটা বাড়ি আর ওনারা জ্বলে ছাই হয়ে যান।কমলার বোন ছিল রবির মা।একমাত্র পরিবার বলতে কমলা choti মাসিই,তাই সে ওদের কাছে চলে আসে।jotil bangla choti শুরুর দিকে রবি একদম চুপচাপ থাকত,নিজের মনেই খেলা করত, কারো সাথে সেমন কথা বলতো না।পরিবারের শোকে তো এরকমই হওয়ার কথা,নিজের বাড়ির কথা হয়তো ওর খুব মনে পড়তো। রবির ১৭ বছর এর জন্মদিনের এক সপ্তাহের মাথায় কমলার স্বামী রাকেশ মারা যায়।মাঠে লাঙ্গল চালাতে গিয়ে একটা আঘাতে ওনার মৃত্যু হয়।হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সে প্রাণ হারায়।কমলা তখন ৩২ বছরের যুবতি বিধবা, এমনকি রবির মন থেকেও আগের শোকটা মুছে যায়নি। কমলার ভাগ্য ভালো যে রবি তখন তার কাছে ছিলো তাই তাকে তার জমি জায়গা হারাতে হয়নি।তার গড়ন ভালো ছিলো,চাষেবাসে মনও তার ছিলো,সারা বছরের ফসলে তাদের গুজরান হয়ে যেত।বাড়ন্ত বয়েসে খাটাখাটুনির জন্য আরো পেটানো হয়ে যায় রবির শরীর,পেশিতে দৃঢ় তার বাহু।আঠারো বছর পেরিয়ে তাগড...

কী ঘটেছিল খেলার শেষ মুহূর্তে?

ম্যাচের শেষ ওভারে পরপর দুটি বাউন্সার। অথচ নো বল দেননি আম্পায়ার! পরে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের কাছে জানা গেল, লেগ আম্পায়ার নো দিতে গিয়েও দেননি! ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ আম্পায়ারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও সমাধান পাননি। বাংলাদেশ দল এটিকে ‘পক্ষপাতমূলক’ আম্পায়ারিং হিসেবে ধরে নিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তো সতীর্থদের মাঠ থেকেই বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ঘটনা খুব বেশি দেখা যায় না। কী এমন হয়েছিল যে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা উত্তেজিত হয়ে পড়লেন! টিম হোটেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে সেই সময়ের একটা চিত্রনাট্য দাঁড় করিয়েছেন এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কায় অবস্থান করা  প্রথম আলো র প্রতিনিধি  রানা আব্বাস ... মাহমুদউল্লাহ (লেগ আম্পায়ার রুচিরা পালিয়াগুরুগেকে):  স্যার, এটা কেন নো বল নয়? পরপর দুটি বাউন্সার দিল! পরেরটার উচ্চতা আরও বেশি ছিল...। (দুই আম্পায়ার কথা বলছেন মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে। গ্যাটোরেড হাতে ব্যাটসম্যানদের কাছে এলেন একাদশের বাইরে থাকা নুরুল হাসান। এ সময় থিসারা পেরেরা সিংহলিজ ভাষায় কিছু বললেন আম্পায়ারদের।) থিসারা (মাহমুদউল্লাহ...