Skip to main content

মন্ত্রী যাই বলুন, সম্মতিহীন যে কোনও যৌন সম্পর্কই আসলে ধর্ষণ

বৈবাহিক ধর্ষণকে ভারতীয় প্রেক্ষিতে ধর্ষণ বলে ভাবা যাবে না। রাজ্যসভায় এমনটাই বললেন কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মেনকা গাঁধী। মন্ত্রীর মতে, বৈবাহিক ধর্ষণের যে সংজ্ঞায় বহির্বিশ্ব অভ্যস্ত, ভারতবর্ষে দারিদ্র, অশিক্ষা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ভাবানুভূতির খাতিরে তার প্রয়োগ সঠিক ভাবে করা সম্ভব না।
অথচ, ২০১৫-র জুনে এক সাক্ষাৎকারে মেনকা গাঁধী ঠিক এর উল্টো ভাবনার কথাই বলেছেন। তখন তাঁর বক্তব্য ছিল, যে কোনও বৈবাহিক ধর্ষণই নারীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক আচরণ এবং দণ্ডনীয়। তিনি আরও বলেছিলেন, বৈবাহিক ধর্ষণ কেবলমাত্র যৌনতার দাবিতে না, স্ত্রীর উপরে নিজের ক্ষমতা কায়েম করতে এবং তাকে আয়ত্তাধীন রাখতে ব্যবহৃত হয়। সে ক্ষেত্রে তাকে অত্যন্ত গুরত্ব দিতে হবে। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে মন্ত্রী তাঁর অবস্থানকে ১৮০ ডিগ্রি বদলে ফেলেছেন। বহু ব্যবহৃত, বহুলচর্চিত বিবাহ নামক লোকাচারটির ‘পবিত্রতা’র দোহাই দিয়ে ভারতীয় নারীদের উপরে ক্রমাগত চলতে থাকা এই নির্যাতনকে চোখ বন্ধ করে অনুমোদনও দিয়ে দিলেন নির্বিচারে!
এ বার একটু দেখা যাক তথ্য কী বলছে।
২০১২তে নির্ভয়ার গণধর্ষণের প্রেক্ষিতে বিচারপতি বর্মা কমিটির যে রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়, সেখানে প্রধান প্রস্তাব ছিল বৈবাহিক ধর্ষণকে সামগ্রিক ভাবে যৌন অত্যাচার বা সেক্সুয়াল অ্যাসল্টের আওতায় নিয়ে আসা। স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রক পরিচালিত জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষার  তৃতীয় সংখ্যাটি দেশের জনগণের কাছে ২০০৫-০৬ সালে প্রথম বার বৈবাহিক ধর্ষণের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। ১৫-৪৯ বছর বয়সী ৮০ হাজার মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, এঁদের মধ্যে ৯ শতাংশ মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন (প্রতি ১২ জনের মধ্যে এক জন)! সেই পরিসংখ্যানে ৯৩ শতাংশ মহিলার ধর্ষক ছিলেন তাঁর প্রাক্তন অথবা বর্তমান স্বামী। ওই পরিসংখ্যান এবং ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যানকে পাশাপাশি পরীক্ষা করে ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র জানায়, বৈবাহিক ধর্ষণের ক্ষেত্রে ১ শতাংশেরও কম মহিলা রিপোর্ট করে থাকেন।জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৩ এর ১৫তম পরিচ্ছেদে কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা কিন্তু সরকার এবং মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে কোনও মতেই মেলানো যাচ্ছে না। মন্ত্রী তথা মন্ত্রক বলছে, বৈবাহিক ধর্ষণের সংজ্ঞা ভারতে প্রযোজ্য নয়, কারণ— দারিদ্র, অশিক্ষা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হতেই পারে, দরিদ্রশ্রেণির মহিলাদের তুলনায় উচ্চবিত্ত শ্রেণির মহিলারা যৌন-নিগ্রহের শিকার হন তুলনামূলক ভাবে কম! অথচ একটু তথ্য খতিয়ে দেখলেই জানা যায়, উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যেও ক্রমাগত ধর্ষিতা হতে থাকা নারীর সংখ্যা নিম্নবিত্ত শ্রেণির থেকে খুব একটা কম নয়! উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যেও প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে এক জন অন্তত জীবনের কোনও না কোনও সময়ে যৌন-নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। এবং যাঁরা শিকার হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশ মহিলা কিছু দিনের মধ্যেই আবার যৌন-অত্যাচারের শিকার হয়েছেন তাঁর স্বামীর কাছে। অর্থাৎ দারিদ্রের দোহাই দিয়ে বৈবাহিক ধর্ষণকে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।
ধর্মবিশ্বাসভিত্তিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সব চেয়ে বেশি  নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন বৌদ্ধ বা অন্য ধর্মাবলম্বী মহিলারা। তার পরে মুসলিম এবং হিন্দু মহিলারা। কিন্তু, বৈবাহিক ধর্ষণকে ‘ধর্ষণ’ বললে ঠিক কোন ধর্মীয় ভাবাবেগ সব চেয়ে বেশি আহত হবে? সেই তথ্য এই প্রতিবেদকের চোখ একেবারেই এড়িয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র বৈবাহিক ধর্ষণের মাত্রা সেই সব মহিলাদের ক্ষেত্রে কম, যাঁরা ১২ বছর বা তার বেশি সময় ধরে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন, মহিলাদের একটি বৃহৎ অংশ নিগৃহিতা এবং ধর্ষিতা হতে থাকবেন এবং মন্ত্রক কেবল অশিক্ষার দোহাই দিয়ে দায় এড়াবেন, এই যুক্তি কতখানি গ্রহণযোগ্য?
স্ত্রীর অনুমতি বিনা তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যে ধর্ষণই, সেই সম্পর্কিত শিক্ষা এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি অথবা পরিকল্পনার আয়োজন করা কি একটি মন্ত্রকের দায়িত্ব নয়? ধর্ষণ তো ‘ধর্ষণ’ই। বিবাহের সুযোগ নিয়ে প্রত্যেক দিন বহু নারীকে তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন-সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা হচ্ছে। আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থায় যেখানে নারী স্বাধীনতা নিয়ে অবাধে প্রশ্ন তোলা চলে, সেখানে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রীর এই রকম উক্তি অত্যন্ত হতাশাজনক এবং আশঙ্কাজনক।
যে দেশে পৌরুষ মানে, নারীর উপরে সম্পত্তির মত অবাধে অধিকার জারি করা, যেখানে প্রতি পদে মহিলারা ঘরে-বাইরে হাজার অলিখিত বাধার সম্মুখীন, সেই দেশের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের এই প্রমাণকে অস্বীকার করা সামগ্রিক ভাবে সে দেশের নারীদের আরও বেশি করে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। ধর্ষণ একটি নারীর সত্তার উপরে আক্রমণ, তাকে নিজের অধীনে রাখার জন্যে পুরুষতন্ত্রের একটি অন্যতম হাতিয়ার। দুঃখের কথা আমাদের মতো দেশে যেখানে এক দিকে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের দাবি তুলে সমাজ নিজের নৈতিক দায়ভার লাঘব করতে চায়, সে দেশের সরকার বিবাহের পবিত্রতার মতো বহু ব্যবহারে দীর্ণ চর্বিতচর্বণের দোহাই দিয়ে দায়মুক্ত হতে চাইবেই। যশোধরা রায়চৌধুরী একটি কবিতার পঙ্‌ক্তি মনে পড়েছে—
‘হে ধর্ষিতা, তুমি জান, শরীর কোথায় শেষ হয়
কোথা থেকে শুরু হয় অদ্ভুত, দ্বিতীয় অপমান...’

Comments

Popular posts from this blog

প্রিয়াঙ্কাকে ছাড়িয়ে দীপিকা

২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাপ্তাহিক ‘ইস্টার্ন আই’য়ের জরিপে ‘এশিয়ার সেরা আবেদনময়ী নারী’র তালিকায় প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে হারিয়ে ১ নম্বর স্থান দখল করেন দীপিকা পাড়ুকোন। এ তালিকায় চারবার শীর্ষ স্থানে ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। দীপিকা আবেদনময়ীর তালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এত দিন রানির আসনে ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। এবার সে তালিকা থেকেও প্রিয়াঙ্কাকে হটিয়ে দিলেন ‘রানি পদ্মাবতী’ দীপিকা পাড়ুকোন। ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম—তিন মাধ্যমেই প্রিয়াঙ্কাকে পেছনে ফেলেছেন দীপিকা। প্রিয়াঙ্কার ফেসবুক পেজের লাইকসংখ্যা ৩২ কোটি ৯৭ লাখ ১ হাজার ৪৪০, সেখানে দীপিকার ফেসবুক পেজের লাইকসংখ্যা ৩৪ কোটি ১৩ লাখ ৭ হাজার ৩৯। একইভাবে টুইটার ও ইনস্টাগ্রামেও এগিয়ে গেছেন দীপিকা। টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে দীপিকার ফলোয়ার যথাক্রমে ২১ লাখ ১০ হাজার ও ২০ লাখ। প্রিয়াঙ্কার টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার সংখ্যা ২০ লাখ ও ১৯ লাখ ৮০ হাজার।পরিষ্কারভাবে প্রিয়াঙ্কাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছেন দীপিকা। বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁদের মধ্যে চলছে এই ঠান্ডা লড়াই। এ বছরের মাঝামাঝি ভারতের জনপ্রিয় পুরুষ ম্যাগাজিন ‘ম্যাক্সিম’-এর জরিপে প্রিয়াঙ্কা চো...

পা দুইটা আমার কাঁদের উপর তুলে ইংলিশ চোদা দেই

আকাশ আর মাঠ আর গ্রাম, যেদিকেই তাকায় সে কলকাতার বিচিত্র সব স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না। সারাপথ এমনি স্বপ্ন দেখতে দেখতে শেষটা সন্ধ্যার কিছু আগে সে মার্টিনের ডেরা কদমতলা ইস্টিশানে গিয়ে পৌঁছোল।       যেখানে গিয়ে নামল  read more  Direct Link :  https://goo.gl/6dhLgQ

The Average Sex Time Is Not as Long as You'd Think

yes, it does seem as if everyone at the all-boys high school and the methadone clinic is complaining of little else. I know what you're thinking: If only we had the perceptions of 34 Canadian and American sex therapists on this. Well, good thing we do        "Canadian and American Sex Therapists' Perceptions of Normal and Abnormal Ejaculatory Latencies: How Long Should Intercourse Last?" coitus considered "adequate" lasted anywhere from three to seven minutes, not including the Pledge of Allegiance. For the more ambitious, seven to 13 minutes was considered a "desirable" length for intercourse. This data, from all the people who see therapists for sexual problems, corresponds closely to earlier studies, which put the average at five to seven minutes. (We can safely blame the two-minute discrepancy on the Canadians.) "Very few people have intercourse  per se  [Latin] that goes longer than 12 minutes," says sex therapist Barry W. McCarth...